সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিল


সাহেব-বাজার ডেস্ক: দেশের প্রথম মোবাইল অপারেটর সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিল করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড বা সিটিসেলকে তাদের টুজি সেলুলার মোবাইল ফোন অপারেটর লাইসেন্স বাতিলের চিঠি পাঠিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এই লাইসেন্সের (নবায়নকৃত) মেয়াদ ২০২৬ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ছিল।

বিটিআরসি অপারেটরটির কাছে ২১৮ কোটি ৪০ লাখ ২০ হাজার ৬৫৯ টাকা পাবে। এই টাকার ওপর বিলম্ব ফি বকেয়া পরিশোধের দিন পর্যন্ত যোগ হবে বা আদালতের রায় অনুযায়ী সিটিসেলকে দিতে হবে।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, ‘তাদের কাছে পাওনা আদায়ে আমরা ফৌজদারি এবং দেওয়ানি মামলা দুটিই করেছি।’ ‘লাইসেন্স বাতিল হওয়ার পর তাদের এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে, সরকারের পাওনা পরিশোধ না করে চলে যেতে পারবে। পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে বিটিআরসি সবসময়ই সক্রিয়’, বলেন তিনি।

২০২২ সালের জানুয়ারির শেষের দিকে অপারেটরটির লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় বিটিআরসি। এরপর এর পূর্বানুমোদনের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠায়। গত মঙ্গলবার এই পূর্বানুমোদন মেলে।

বিটিআরসি ২০২২ সালের ২৬ মে সিটিসেলকে চিঠি দিয়ে তখন ১২৮ কোটি ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৩২৩ টাকাসহ যত পাওনা হয়েছে তা পরিশোধ করতে বলে। ওই চিঠিতে ১৫ দিনের সময় দেয়া হয়। সিটিসেল ওই বছরের ৯ জুন সেই চিঠির উত্তরে বিটিআরসিকে জানায়, বকেয়ার বিষয়টি উচ্চ-আদালতে বিচারাধীন থাকায় এ বিষয়ে তাদের কোনো মন্তব্য নেই।

এ অবস্থায় বিটিআরসি প্রথমে প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড বা সিটিসেলের রেডিও কমিউনিকেশন ইকুইপমেন্ট লাইসেন্স ও তরঙ্গ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর তাদের টুজি সেলুলার মোবাইল অপারেটর লাইসেন্স বাতিলে কারণ দর্শানো নোটিশ দিতে সরকারের কাছে অনুমোদন চায়।

এর আগে ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিলের সব আয়োজনই সম্পন্ন করে ফেলেছিল নিয়ন্ত্রণ কমিশনটি। এমনকি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ হয়ে প্রধানমন্ত্রীর টেবিলও ঘুরে এসেছিল লাইসেন্স বাতিলের ফাইল। তখন সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিলের বিষয়ে বিটিআরসি মূলত পুরনো বকেয়া পরিশোধ না করা, আদালতের নির্দেশ অনুসারে চলতি দেনা যেমন- স্পেকট্রাম এবং লাইসেন্স ফি পরিশোধ না করা এবং লাইসেন্সের শর্তভঙ্গ করার অভিযোগ আনে। এরপর সিটিসেল আদালতে গেলে বিটিআরসির বন্ধ করা স্পেকট্রাম ফেরত এবং লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের নির্দেশনা দেন আদালত।

এদিকে বকেয়া আদায়ে সিটিসেলের সঙ্গে বিটিআরসির মামলা এখনও চলছে। যেখানে আদালতের রায় অনুযায়ী সিটিসেল বিটিআরসির এই পাওনা পরিশোধ করলে বিটিআরসির দায়ের করা মামলা নিষ্পত্তি হবে বিবেচিত হবে।

২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের রায়ে, সিটিসেলকে বিটিআরসির দাবি করা রাজস্ব বা পাওনার দুই তৃতীয়াংশ ওই তারিখ হতে চার সপ্তাহের মধ্যে এবং অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশ পরবর্তী এক মাসের মধ্যে জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।

একই সঙ্গে আদালত বিটিআরসির দাবি করা পাওনা পুনর্বিবেচনার জন্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে একটি কমিটি করে দেন। ওই কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ীই অপারেটরটির কাছে এই ১২৮ কোটি ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৩২৩ টাকা পাবে বিটিআরসি।

প্রতিবেদন অনুসারে, লাইসেন্স নবায়নের স্পেকট্রাম ফির দুই কিস্তির টাকা বাকি থাকাসহ ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সব মিলে অপারেটরটির বকেয়া হয় ৩৭২ কোটি ৭২ লাখ ৯৩ হাজার ৭৬৭ টাকা। যার মধ্যে আদালতের রায় অনুযায়ী পরিশোধ করা হয় ২৪৪ কোটি ৬৫ লাখ ৯৫ হাজার ৪৪৪ টাকা। আর ওই পাওনা টাকার সঙ্গে বার্ষিক লাইসেন্স ফি, বার্ষিক স্পেকট্রাম ফি এবং এর সঙ্গে ভ্যাট ও বিলম্ব ফি যোগ হয়ে সিটিসেলের দেনা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

১৯৮৯ সালে দেশের প্রথম মোবাইল অপারেটরের লাইসেন্স পেয়ে সিটিসেল ১৯৯৩ সাল থেকে সেবা দিতে শুরু করে। অপারেটরটির ৪৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ শেয়ার সিঙ্গাপুরের টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা কোম্পানি সিংটেলের হাতে। আর সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোর্শেদ খানের প্যাসিফিক মোটর্সের রয়েছে ৩৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ শেয়ার। এ ছাড়া ১৭ দশমিক ৫১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ফার ইস্ট টেলিকমের হাতে। সেটিও আসলে মোর্শেদ খানেরই আরেকটি কোম্পানি।

এসবি/এমই