শতকোটি টাকার সবজি উৎপাদন


সাহেব-বাজার ডেস্ক : প্রতি ইঞ্চি জমি আবাদের আওতায় আনতে সারাদেশের পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় আবাদ করতে ৪৩৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। প্রকল্পের দুই বছরে ৩৩ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সবজি। এ ছাড়া বাগান থেকে মিটছে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পরিকল্পনা কমিশন।

২০২১ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া প্রকল্পটি এই বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। পরিকল্পনা কমিশন মেয়াদ বাড়ালে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন’ প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা অনুমোদন করে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় পুরোপুরি সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে সারাদেশের ইউনিয়ন ও পৌরসভার বসতবাড়ির অব্যবহৃত জমিতে প্রায় ৫ লাখ পুষ্টি বাগান স্থাপন করা হবে। পরিবারের সারা বছরের শাকসবজি ও মসলার চাহিদা পূরণ করার জন্য সরকার এই প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে।

জানা গেছে, প্রকল্পটির আওতায় গ্রামের মানুষ বসতবাড়ির আঙিনা, পুকুর ও খালের পাড়, বাড়ির আশপাশ, স্যাঁতসেঁতে ছায়াযুক্ত প্রতি ইঞ্চি অব্যবহৃত ও অনাবাদি জমিতে শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদন করবেন। এতে মানুষের পুষ্টিহীনতা দূর হওয়ার পাশাপাশি খাদ্যনিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে বর্তমানে চাষযোগ্য অনাবাদি জমির পরিমাণ ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৬৬৮ হেক্টর। হাওড় ও পাহাড়ের কিছু অংশ এই হিসাবের বাইরে রয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক ড. মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশের গ্রামের মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। তাদের হাতে কলমে কৃষি কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। পতিত অনাবাদি ও বাড়ির আঙিনা থেকে এখন মানুষ তাদের পুষ্টির জোগান দিচ্ছেন। পাশাপাশি তারা বিক্রিও করছেন। এ প্রকল্পের চাহিদা রয়েছে। আগামীতেও এ প্রকল্পের চাহিদা থাকবে। এই চাহিদার কথা বিবেচনা করে প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পের সারসংক্ষেপে প্রতিটি ইউনিয়ন এবং পৌরসভার বসতবাড়ির অব্যবহৃত জমিতে ১০০টি করে অর্থাৎ মোট ৪ লাখ ৮৮ হাজার সবজি, ফল ও মসলা জাতীয় ফসলের পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন করার কথা বলা হয়। মাটির স্বাস্থ্যসুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য একশটি উপজেলায় একটি করে ১০০টি কমিউনিটি বেইজড ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন পিট স্থাপন করার কথাও বলা হয়। উৎপাদিত সবজি সংরক্ষণের জন্য বিদ্যুৎবিহীন ১২৮টি (৬৪ জেলায় ২টি করে) কুল চেম্বার স্থাপন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি নানা সরঞ্জাম সরবরাহের পরিকল্পনাও করা হয়।

প্রকল্পের সার সংক্ষেপ বলছে, এটি বাস্তবায়ন করা হলে পারিবারিক পর্যায় নিরাপদ মানসম্মত শাকসবজি, মসলা এবং মৌসুমি ফল উৎপাদনে সহায়ক হবে। উৎপাদিত ফসল দ্বারা পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কিষান-কিষানির আয় বৃদ্ধি পাবে। কমিউনিটি বেইজড ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদনের মাধ্যমে কিষান-কিষানিদের আয়বর্ধক কাজে সম্পৃক্ত করা হবে, যা গ্রামীণ পর্যায়ে কৃষকদের দক্ষ জনগোষ্ঠীতে রূপান্তরে সহায়তা করবে।

 

এসবি/এমই