বাইরে বনলতা, ভেতরে মেঘনা নামে রমরমা দেহ ব্যবসা


নিজস্ব প্রতিবেদক : বাইরে সাইনবোর্ডে লেখা ‘হোটেল বনলতা আবাসিক’। ভেতরে ঢুকে কাউন্টারে দেখা গেল, হোটেলের নাম ‘মেঘনা আবাসিক’। হোটেলের নামটি আগে মেঘনাই ছিল। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুলিশ হোটেলটি বন্ধ করে দিয়েছিল অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে। এর কিছু দিন পর বাইরে হোটেলের সাইনবোর্ড পরিবর্তন করে আবার চলছে একই কার্যকলাপ।

রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকায় জিপিও ভবনের বিপরীতের এক ভবনে রয়েছে এই আবাসিক হোটেলটি। হোটেল ভবনের নীচতলায় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আর দোতলা থেকে চতুর্থ তলায় আবাসিক হোটেলের আড়ালে চলছে রমরমা দেহ ব্যবসা। এ নিয়ে ভীষণ বিরক্ত নীচতলার ব্যবসায়ীরা। হোটেলের এমন কার্যক্রম সম্পর্কে সবাই জানেন। তারপরও বন্ধ হয় না রহস্যজনক কারণে। অভিযোগ, সবাইকে ‘ম্যানেজ’ করেই চলে এ কারবার।

রোববার সকালে হোটেলের ভেতরে গিয়ে নারীদের পদচারণা দেখা গেল। দোতলায় কাউন্টারে ছিলেন মোনতাজ আলী ও মো. দর্পণ নামের দুজন। বাইরে থেকে কেউ এলে দরদাম মিটিয়ে হাতে একটি প্লাস্টিকের টোকেন ধরিয়ে তাকে তিনতলায় পাঠিয়ে দিচ্ছিলেন তারা। দুজন জানালেন, হোটেল মালিক মাইনুল ইসলামই সবকিছু ‘ম্যানেজ’ করে হোটেল চালাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, মাইনুল ইসলামের বাড়ি ফরিদপুরে। দীর্ঘ সময় রাজশাহীতে থেকে এ কারবার চালান। করোনার মধ্যে ৪০ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের পাশে ‘লাল বোর্ডিং’ নামের আরেকটি হোটেল ভাড়া নিয়েছেন তিনি। রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম আগে রাজপাড়া থানায় ছিলেন। তিনি ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ‘হোটেল মেঘনা’ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পরে তিনি বদলি হয়ে গেলে সাইনবোর্ডে নাম পাল্টে আবার হোটেলটি চালু হয়েছে।

হোটেল ভবনের নীচতলার এক ব্যবসায়ী এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালেন। বললেন, ‘আমার এই সামনে দিয়েই হোটেলের সবাই চলাচল করে। খুব ঘৃণা লাগে। তাই মোটা কাঁচ লাগিয়েছি যেন দেখতে না পাই।’ তিনি বলেন, ‘এসবের প্রতিবাদ করে লাভ নাই। প্রতিবাদ করলে আমরা ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবো। সকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হোটেলে আসে, বিকালে আবার যা ছিল তাই। এরা মাফিয়া না হলে এভাবে এসব চালাতে পারে?’

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের দাবি, রাজপাড়া থানার নতুন ওসি জাহাঙ্গীর আলম আসার পর হোটেলটি আবার চালু হয়েছে। ওসির বডিগার্ড হিসেবে কাজ করেন পুলিশ কনস্টেবল আবদুর রহমান। তিনি থানার ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে পরিচিত। ২০১২ সাল থেকে কনস্টেবল আবদুর রহমান রাজপাড়া থানায়। মাঝে একবার ঢাকায় বদলি হলেও কিছুদিনের মধ্যে আবার রাজপাড়ায় ফিরেছেন। গত জানুয়ারিতে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) সব থানায় গণবদলি হলেও রহমান থেকেছেন রাজপাড়াতেই।

এই রহমান ওসির নামে হোটেলটি থেকে প্রতিমাসে ৫০ হাজার টাকা নেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া থানার সেকেন্ড অফিসার কাজল নন্দী প্রতিমাসে নেন আরও ১০ হাজার টাকা। নগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলাদাভাবে হোটেলটি থেকে আরও ৫০ হাজার টাকা নেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। হোটেল মালিক মাইনুল ইসলাম ও ম্যানেজার মহিবুল ইসলাম লেনদেন করে থাকেন।

হোটেলটি থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজপাড়া থানার সেকেন্ড অফিসার কাজল নন্দী বলেন, ‘এসব মিথ্যা কথা। কয়েকমাস আগে আমরাই তো হোটেলটি বন্ধ করে দিয়েছি। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুজ্জামান টুকুও জানেন। এখনও হোটেলটি বন্ধই আছে।’ তবে বাস্তবে রোববার সকালেও হোটেলটি চালু দেখা গেছে।

হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপ চালানোর বিষয়ে জানতে চাইলে এর মালিক মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘কীভাবে চলছে সেটা তো এখন ফোনে বলব না। কাল দুপুরে একবার দেখা করেন। এক কাপ চা খাব। তখন বলব।’

হোটেলটি সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজপাড়া থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপ চলে কি না তা আমার জানা নেই।’ তার নামে কনস্টেবল আবদুর রহমানের টাকা নেন, এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘আমি দেখছি। খোঁজ নিচ্ছি।’

 

এসবি/আরআর/এমই