দ্রব্যমূল্যে স্বস্তির লক্ষ্য থাকছে নতুন বাজেটে


সাহেব-বাজার ডেস্ক: গত ফেব্রুয়ারি মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। রমজানের আগে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি প্রবণতায় মূল্যস্ফীতির হারও বাড়ে। রমজান ও ঈদের কারণে আগামীতে এ হার আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাম্প্রতিক সময়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। এতে খাদ্যপণ্যের মূল্য বেশি বেড়েছে। এ কারণে জাতীয়ভাবে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এ অবস্থায় দ্রব্যমূল্যে স্বস্তির খবর দেওয়া যায়, এমন বাজেট প্রণয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। আর এর অন্যতম পদক্ষেপ হবে কর কাঠামোয় কৌশলগত পরিবর্তন আনা।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সরকার এর মধ্যে এমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি যে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। বরং সরকারের কার্যক্রম মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে। কেননা সরকার বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। ফলে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে তারল্য ঢালছে সরকার। পাশাপাশি রিফাইন্যান্সিংয়ে নতুন করে অর্থায়ন করা হচ্ছে। ফলে এগুলো সবই সম্প্রসারণমুখী মুদ্রানীতির কার্যক্রম। তবে কিছু ক্ষেত্রে সরকার করছাড় দিয়েছে। কিন্তু তার সুবিধা পেয়েছে মূলত ব্যবসায়ী বা বিক্রেতারা। ক্রেতাদের কাছে সেই সুবিধা পৌঁছেনি।

এদিকে আগামী কয়েক বছর বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখে পড়বে বলে এক প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দিয়েছে জাতিসংঘ। তারা বলেছে, চলতি ২০২২-২৩ ও আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধির হার কমবে, কিন্তু একই সঙ্গে বাড়বে মূল্যস্ফীতির চাপ। প্রসঙ্গত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সম্ভাবনা-২০২৩ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির অর্থনৈতিক ও সামাজিকবিষয়ক বিভাগ এ প্রতিবেদন প্রণয়ন করেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এমন পরিস্থিতি মাথায় রেখেই আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ করছে অর্থ বিভাগ। গত বছরের জুনে যখন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হয়, তখন করোনা মহামারীর রেশ থাকলেও দ্রব্যমূল্য ছিল অনেকটাই সহনীয়। সংকটের কারণে সরকার একাধিকবার গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। এতে বেড়েছে শিল্প ও কৃষি উৎপাদন খরচও। এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের ফলে বাংলাদেশে খাদ্য, শিল্পসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের বাজারে এর প্রভাব পড়েছে ব্যাপকভাবে। এছাড়া বাজারে সরকারের তদারকিও কমেছে। সব মিলিয়ে এখন চরম এক অস্থির সময় পার করছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এমন অস্থিরতার মধ্যেও জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জনগণকে স্বস্তির খবর দিতে চায় সরকার। যার প্রতিফলন মিলবে আগামী অর্থবছরের বাজেটে।

অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো বলছে, করকাঠামোতে এমন কিছু কৌশলগত পরিবর্তন আনা হবে। যা করে ভোগ্যপণ্যের বাজারে এক ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এতে করে চাল, ডাল, তেলসহ খাদ্যপ্যণের দাম কমানোর কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশনা হবে। এছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আসছে বাজেটে নির্বাচনী কৌশল, ব্যবসা-বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। সে অনুযায়ীই বাজেট প্রণয়নের কাজ চলছে। জাতীয় রাজস্ব রোর্ড (এনবিআর) বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে ইতোমধ্যে প্রাক বাজেট আলোচনা শুরু করেছে। এ মাসেই প্রাক বাজেট সভা শুরু করবে অর্থ বিভাগও। যেসব সভায় মূলত অর্থমন্ত্রী নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। আর বাজেটের কর কাঠামো, বরাদ্দসহ অন্যান্য সব বিষয়ে বিভিন্ন রকমের পরামর্শ আসে। যার কিঞ্চিৎ হলেও প্রতিফলন ঘটে বাজেটে।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বাজেটের অঙ্ক যা-ই হোক বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু হলেও সুখবর দিতে চায় সরকার। জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা। জনগণের কাঁধে নতুন করে করের বোঝা না চাপানো। যদিও বাজেটের ঘাটতি ও ভর্তুকি কমাতে গ্যাস-বিদ্যুৎ, পানিসহ সব ধরনের জ্বালানি ও পরিসেবার দাম বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। কিন্তু আসছে বাজেটে এমন কিছু উদ্যোগ নিতে চায় সরকার, যার ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় লাগামহীনভাবে বাড়বে না। জিনিসপত্রের দাম নাগালের মধ্যে রাখতে হবে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই বাজেট প্রণয়নের কাজ করছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা। আর অর্থমন্ত্রী ইতোমধ্যে বলেছেন, এবারের বাজেট হবে জনকল্যাণের বাজেট। এমন একটি বাজেট দেওয়া হবে যার মাধ্যমে সবাই উপকৃত হবেন।

সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এটিই বর্তমান সরকারের শেষ বাজেট। এমনকি এই বাজেটের পুরোটা সময় বাস্তবায়নও করতে পারবে না বর্তমান সরকার। কেননা আগামী বছর নতুন সরকার আসবে নির্বাচনের মাধ্যমে। সে হিসেবে অর্থবছরের অর্ধেক বর্তমান সরকার ও পরবর্তী ছয় মাস নতুন সরকার এসে বাস্তবায়ন করবে। সেটাকেও দেখা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণভাবে।

এই ভাবনা মাথায় রেখেই আগামী বাজেটের অর্থ বরাদ্দের খাত সাজানো হচ্ছে। যেসব খাতের সুযোগ-সুবিধার সঙ্গে সরাসরি ভোটার তুষ্টির বিষয় সম্পৃক্ত; আগামী বাজেটে সেসব খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যেমন বরাদ্দ গত অর্থবছরের তুলনায় বাড়ানোর ঘোষণা আসছে, তেমনি সুবিধাভোগীর আওতাও সম্প্রসারিত করা হচ্ছে। বাজেটের আরও কোন কোন খাতে নজর দিলে ভোটারদের আকৃষ্ট করা যাবে, সেদিকেও খেয়াল রাখা হচ্ছে। এছাড়া করোনা ভাইরাস মহামারীর পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে যে ধাক্কা লেগেছে তা পুনরুদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতেও নতুন রূপরেখা থাকছে আগামী বাজেটে।

 

এসবি/এমই