নিজস্ব প্রতিবেদক: চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ ও গেদে স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দীর্ঘ তিন বছর বন্ধ থাকার পর আবারও খুলে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকার গুরুত্বপূর্ণ সোনামসজিদ ও গেদে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট খুলেছে।
ইমিগ্রেশন কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাজশাহীস্থ ভারতীয় সহকারী হাই-কমিশনার মনোজ কুমার। ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার বলেন, দীর্ঘ তিন বছর পর বন্ধ এই চেকপোস্টটি খুলে দেওয়া হলো। যাত্রীদের আর হয়রানির স্বীকার হতে হবে না। এই চেকপোস্ট দুই দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও গুরুত্বপূর্ণ বন্ধন। এই বন্দরটি একদিকে যেমন দূরত্ব কমিয়ে আনবে। অন্যদিকে অর্থও বাঁচাবে। সোনামসজিদ-মাহদিপুর স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন দিয়ে আসা যাওয়া করতে পারবেন পাসপোর্টধারী যাত্রীরা। এতে হয়রানির সাথে দুরত্বও কমবে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার।
তিনি আরও বলেন, করোনাকালীন পরিস্থিতিতে চেকপোস্টটি বন্ধ হওয়ার কারণে ব্যবসা, চিকিৎসা ও ভ্রমণ করতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহীসহ আশেপাশের জেলাগুলোর যাত্রীদের যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে যাওয়া-আসা করতে হতো। এতে হয়রানি ও অর্থনৈতিক সমস্যাসহ অতিরিক্ত দুরত্ব বেড়েছিল। এতে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হত। কিন্তু আজ এই চেকপোস্টের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে খুলে দেয়ার কারণে যাত্রীদের এই দুর্ভোগের অবসান হলো।
উদ্বোধনকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি আবদুলল ওয়াহেদ বলেন, এ ইমিগ্রেশনের কার্যক্রমের দ্বার খুলে দেয়ার কারণে বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের ভারতগামী যাত্রীদের একদিকে যেমন খরচ কমবে, তেমনি অন্যদিকে দুরত্ব করবে। ভারতীয় ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণে আমরা বাংলাদেশী ২৫ জন ব্যবসায়ীকে নিয়ে ভারতে যাচ্ছি এই ইমিগ্রেশন দিয়ে।
তরিকুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, দীর্ঘ তিন বছর ধরে আমরা ব্যাপক দুর্ভোগে ছিলাম। আমদানি-রপ্তানির কাজে আমাদেরকে ওপারে (ভারত) যেতে হয়। কিন্তু গত ৩ বছর যশোরের বেনাপোল দিয়ে যেতে হয়েছে। এতে দুরত্ব যেমন বেড়েছে ৬০০ কিলোমিটার, তেমনি খরচও অনেক হয়েছে। আমরা স্বস্তি পেয়েছি এই ইমিগ্রেশন চালু হওয়ায়।
উদ্বোধনের সময় উপস্থিত ছিলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. শামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মুহা. জিয়াউর রহমান, মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ফেরদৌসী ইসলাম জেসী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ, ভারতের মহদীপুর এ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার (কাস্টমস) দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়, এ্যাসিস্ট্যান্ট ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) বৈভব চৌধুরী, বিএসএফের কামাডেন্ট সঞ্চয় শর্মা, মহদীপুর স্থলবন্দরের সুপার এলসি ইমচার্জ দেশ দুলাল চ্যাটার্জিসহ অন্যান্যরা।
সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন খুলে দেয়ায় ভারতীয় সরকার, পশ্চিমবঙ্গের সরকার, ভারতীয় হাই কমিশনার (ঢাকা), রাজশাহীর ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার, এফবিসিসিআইসহ বাংলাদেশ সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও পাসপোর্টধারী যাত্রীরা।
সোনামসজিদ রুটে বছরে লক্ষাধিক বাংলাদেশি বিভিন্ন প্রয়োজনে ভারতে যাতায়াত করেন। এগুলো বন্ধ থাকায় এ অঞ্চলের লোকজনকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার ঘুরপথে যশোরের বেনাপোল দিয়ে ভারতে যাতায়াত করতে হচ্ছিলো। এতে সময় ও অর্থ দুটোয় বেশি লাগতো।
উল্লেখ্য, প্রাণঘাতী করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের ১৫ মার্চ সোনামসজিদ চেকপোস্ট বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ তিন বছর যাত্রী চলাচল বন্ধ থাকলেও আমদানি-রপ্তানির জন্য সোনামসজিদ স্থলবন্দর চালু রয়েছে। ইমিগ্রেশন চেকপোস্টটির বিপরীতে রয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার মাহদীপুর স্থলবন্দর।
এসবি/এমই