তারেকের সাবেক এপিএসের পক্ষে অ্যাড. কামরুল, আ. লীগ নেতারা ক্ষুব্ধ


সাহেব-বাজার ডেস্ক: অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) নুর উদ্দিন আহমেদ অপুর পক্ষে আদালতে শুনানি করা নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনা চলছে। গত সোমবার সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে এ শুনানিতে অংশ নেন ঢাকা-২ আসনের এই সংসদ সদস্য ও সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী। এ ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা দেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ। সমালোচনা করছেন দেশের বিশিষ্টজনরাও।

ক্ষমতাসীন দলের নেতারা মনে করেন, প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে তিনি এই মামলায় যেতে পারেন না। কেউ কেউ এটাকে নৈতিকতা বিবর্জিত কাজ বলেও মনে করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন অগ্রজ নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশ ও দেশের মানুষের জন্য অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। আর আমাদের অনেকেই ক্রমে বিবেকবর্জিত কাজে যুক্ত হয়ে যাচ্ছি। টাকার মোহে আমরা অনেক সত্য ও সুন্দর থেকে দূরে চলে গেছি। আমাদের উচিত হবে আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুকন্যার নীতির প্রতি অটুট থাকা।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ‘নীতিগত বিষয় এবং জনশ্রুতি এই দুটোর কোনোটাকেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম একজন আইনজীবী হিসেবে কারও পক্ষে যেমন দাঁড়াতে পারেন এটা যেমন ঠিক; তেমনি বহুল আলোচিত-সমালোচিত একজন ব্যক্তির এপিএসের পক্ষে ওকালতি করা আমি মনে করি দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অনৈতিক।’

এরই মধ্যে অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম আদালত প্রাঙ্গণে সহকর্মী ও সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, মামলার কোথাও লেখা ছিল না নুর উদ্দিন আহমেদ অপু তারেক রহমানের এপিএস। তাই বিষয়টি তিনি জানতেন না। এ ব্যাপারে আবদুর রহমান বলেন, ‘মামলায় তারেক রহমানের এপিএস লেখা ছিল কিনা সেটা প্রাসঙ্গিক কথা না। তিনি যার সম্পর্কে লড়বেন সে বিষয়ে যাছাই-বাছাই করে লড়বেন, সেটাই তো মানুষের প্রত্যাশা।’

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এক জুনিয়র এ মামলায় আমাকে সিনিয়র হিসেবে নিয়োগ দেয়। সিনিয়র হিসেবে আমি ব্রিফ করেছি। এর আগে এই মামলাটি শুনানি করেছেন প্রয়াত অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু। তা ছাড়া মামলার কোথাও লেখা ছিল না যে, নুর উদ্দিন আহমেদ অপু তারেক রহমানের এপিএস ছিল। যদি জানতাম তাহলে কী মামলা নিতাম? বা সে কী আমার কাছে আসার সাহত পেত?’ এখন তো জানলেন। পরবর্তীতে কোনো পদক্ষেপে যাবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন যদি তারা পরবর্তী পদক্ষেপে যায় তাহলে জুনিয়র যার কাছে যাবে সে মামলা করবে।’

এই বিষয়ে দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. খুরশিদ আলম খান গণমাধ্যমে বলেন, ‘আইনজীবী হিসেবে কামরুল ইসলামের আলাদা একটা পরিচিতি আছে। তিনি যে কোনো মামলায় লড়তে পারেন। এতে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে আদর্শ বলে একটা ব্যাপার থাকে, দৃষ্টিভঙ্গিগত একটা ব্যাপার থাকে। দৃষ্টিভঙ্গিগত ব্যাপারটা সবসময় পেশাগত নৈতিকতার মধ্যে পড়ে না বা পড়লেও অনেকে অনেকভাবে মানিয়ে নেন। কিন্তু আদর্শগত ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’ তিনি বলেন, ‘যারা সংসদ সদস্য, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করেছেন বা করছেন, তারা তো দেশ জাতির অহঙ্কার। তাদের কাছে দেশ জাতির অনেক প্রত্যাশা থাকে। কাজেই যারা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, তারা যদি আদর্শগত দিকটা বজায় রাখেন, তাহলে আমাদের নীতি-নৈতিকতার মানটা আরও বৃদ্ধি পাবে।’

খুরশিদ আলম খানের মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘উনি কথা বলতে আসলেন কেন? এই মামলার সঙ্গে তো উনি সম্পৃক্ত নন। তা ছাড়া মামলাটি তো দুদকেরও না।’

এ বিষয়ে খুরশিদ আলম বলেন, ‘আমি একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেছি। এই যেমন এখন আপনি প্রশ্ন করছেন আর আমি উত্তর দিচ্ছি- বিষয়টি ঠিক তেমনই।’

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বরের ঘটনায় মতিঝিল থানায় অপুর বিরুদ্ধে মামলা দুটি দায়ের করে র‌্যাব। এতে বলা হয়, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও দেশকে অস্থিতিশীল করতে মতিঝিল সিটি সেন্টারে ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ এবং ইউনাইটেড করপোরেশনের অফিসে বিপুল পরিমাণ অর্থ মজুদের অভিযোগ পায় র‌্যাব-৩। সংবাদ পেয়ে ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে¡ অভিযান চালানো হয়।

অভিযানে ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহমুদুল হাসানের ভাগ্নে এএম হায়দার আলীকে আটক করে র‌্যাব। এ সময় তার কাছ থেকে ৩ কোটি ১০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় ছয়জনসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের হয়। এ মামলার আসামি নুর উদ্দিন আহমেদ অপু তারেক রহমানের এপিএস ও শরীয়তপুর-৩ আসনে বিএনপির দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন।

২০১৯ সালের ৪ জানুয়ারি রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তারের পর থেকে অপু কারাগারে আছেন। এ দুই মামলায় নিম্ন আদালতে জামিন চেয়ে ব্যর্থ হলে হাইকোর্টে এসে জামিন চান অপু। পরে গত বছর ২ ডিসেম্বর সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় অপুকে জামিন দেন হাইকোর্ট। আর অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনের মামলায় জামিন হয় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি। জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম।

পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে গত বছর ৫ ডিসেম্বর ও গত ২৬ ফেব্রুয়ারি তার জামিন স্থগিত করে চেম্বার আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন দুটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। এর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ অপুর জামিনের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। আবেদন দুটি সোমবার (১৩ মার্চ) বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী। নুরউদ্দিন আহমেদ অপুর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। শুনানির পর গত মঙ্গলবার আদেশে অপুর বিপক্ষে যায়। অর্থাৎ হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগেও বহাল থাকে।

 

এসবি/এমই